ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৮ জুলাই ২০২৫

শেষ হলো আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন

নদীর অধিকার রক্ষায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান 

প্রকাশিত : ২২:১৯, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ২২:২০, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

নদী ও পানির অধিকার রক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশগুলোর আন্ত:দেশীয় সহযোগিতার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তার দাবি আদায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। কাজ করতে হবে আন্ত:দেশীয় রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও তার বাস্তাবায়ন নিয়ে। তা না হলে বাংলাদেশের নদীর পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।    

বুধকার পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় দু’দিন ব্যাপি চতুর্থ আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এমন কথা বলেন দেশী-বিদেশী আলোচকরা। এবারের পানি সম্মেলনের বিষয় ছিল ‘রিভার: এ লিভিং বিয়িং’।

দ্বিতীয় দিনে ‘নদী এবং নদীর অধিকার রক্ষায় সাধারন মানুষের উদ্যোগ’ বিষয়ে আলোচনা শুরু হয় একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির-এর সভাপতিত্বে। যেখানে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

এই অংশে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা মো. রফিউল বারী ‘তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকায় অনিয়ম: পানি বন্টনের প্রভাব’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। যেখানে তিনি বলেন, "গজলডোবা ব্যারেজের মাধ্যমে ভারত পানির সুষ্ঠু বণ্টন করছে না। এর প্রভাব পরছে বাংলাদেশে। বর্ষায় বেশি পানি আসে। আবার শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনে পানি আসছে না। এর ফলে কৃষি, মাছ এবং জীবিকায় মারত্মক প্রভাব পরছে।”

তিনি আরো বলেন, "পানি চুক্তি সঠিক হওয়া দরকার। সব পক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। সমস্যা সমাধানে আলোচনা করে সঠিক পানি বণ্টন চুক্তি করতে হবে। আবার আইন হলেই হবে না, তার সমাধান করতে হবে দু’দেশের রাজনৈতিক চিন্তার একত্রিকরণের মাধ্যমে। ভারত বাংলাদেশের ওয়াটার গর্ভনেন্স ভাল না। আমাদের আঞ্চলিক সহযোগিতা কম। কিন্তু ইউরোপ বা অন্য জায়গায় নদী ও পানির সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা দেখা যায় ।"

আলোচনায় উঠে আসে অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক বিষয়টি। গবেষণা প্রবন্ধে উঠে আসে ভারত শক্তি ও অভ্যন্তরীন নানা কারণে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করছে। ভাগাভাগি থেকে ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক সহযোগিতা,আলোচনা এবং পানি সুশাসন ছাড়া কোন সমস্যা সমাধান সম্ভব না।

নদী গবেষক বুশরা নিশাত বলেন, “আমাদের নদী ও পানি সমস্যা সমাধানে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে প্রথমে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে হবে। তারপর দেশীয়, আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক সমাধান আনতে হবে।”

একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, “সবকিছুর মূলে রয়েছে রাজনীতি। বৈশ্বিক রাজনীতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সহজভাবে মানুষের মধ্যে তথ্য পৌঁছাতে হবে। এজন্য দেশের নেতা-নেত্রীর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। সেটা ভারতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আন্ত:মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যেও সমন্বয় থাকা দরকার। তা না হলে নদী সমস্যার সমাধান হবে না।”

দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনের বিষয় ছিল ‘জলবায়ূ ন্যায্যতা’। আইউসিএন বাংলাদেশ-এর প্রধান রকিবুল আমীনের সভাপতিত্বে তিনটি গবেষণাভিত্তিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিন গবেষক।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই দেশী-বিদেশী অংশগ্রহণকারীরা কলাপাড়ার পানি জাদুঘরে যান। পানি জাদুঘর পরিদর্শন করে সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনায় অংশ নেন তারা। পানি জাদুঘর প্রাঙ্গনে কাঠমুন্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাম দেবী বলেন, “নদীর অধিকার রক্ষায় নদীর আদ্যপান্ত আমাদের জনতে হবে। কি কারনে নদী মারা যায়; নদী রক্ষায় কি উদ্যোগ নেয়া যায়; সেজন্য গবেষণা ও জ্ঞানভিত্তিক আলোচনা বাড়াতে হবে। পানি জাদুঘর সেই সুযোগ তৈরি করছে।”

সম্মেলনের প্রথম দিনে নদীকে জীবন্ত সত্ত্বার স্বীকৃতি দিতে জোর দেন সরকারি-বেসরকারি বিশেষজ্ঞরা। একশনএইড বাংলাদেশ গত চার বছর ধরে নদী ও পানির অধিকার প্রতিষ্ঠায় পটুয়াখালীতে আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন করে আসছে। কারণ এখানেই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করছে এশিয়ার প্রথম পানি জাদুঘর।

এসি  

   


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি